‘সহিংসতা বন্ধ না হলে বিদেশিরা হস্তক্ষেপ করতে পারে’

Share Button

Human-Rights-Watch

রিপোর্ট:-দৈনিক মুক্তকন্ঠ
প্রকাশ: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।

বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিরোধীদের ওপর দমনপীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। রক্তস্রোত বন্ধ না হলে বিদেশিরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংগঠনটি। শুক্রবার এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সংঘটিত সহিংসতা ও অন্যান্য অপরাধ বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। এমনতাবস্থায়  সকল জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, গণগ্রেফতার, গুমের ঘটনা বন্ধ করা সরকারের দায়িত্ব। চৌদ্দগ্রাম, রংপুর, বগুড়ায় যাত্রীবাহী বাসে ও রাজধানীর মৎস্যভবন এলাকায় পুলিশ ভ্যানে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, গত এক মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রায় ৬০ জন মারা গেছে। শত শত লোক জখম হয়েছে। হাজারো লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। সহিংসতায় পুড়ছে দেশ। তাই এ রকম সহিংসতাপূর্ণ বেআইনি কাজ যাতে দলের নেতা-কর্মীরা না করে, সে ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলকে পরিষ্কার করে বিবৃতি দিতে হবে। বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউর এশিয়ার প্রধান ব্রান্ড অ্যাডামস বলেন, ‘ধারাবাহিক অপরাধ থামাতে সব রাজনৈতিক দলকে কাজ করতে হবে এবং এ রকম সব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। সহিংস অপরাধের জন্য বাছবিচারহীনভাবে বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যা, জখম ও গ্রেফতার যৌক্তিক হতে পারে না।’

বাংলাদেশে বিরোধীদের ডাকা হরতাল-অবরোধে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, এর মধ্যে পেট্রোল বোমা হামলায় সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আর এই হামলায় খেটে খাওয়া নিরীহ জনগণ বলি হচ্ছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই সব হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপি একে অপরকে দায়ী করে আসছে। পেট্রোল হামলা রোধে সরকার কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিলেও তাতে কাজ হচ্ছে না।

৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিএনপি- জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠনের প্রায় ১৭ জননেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। তারা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। তবে তাদের পরিবারের দাবি, বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এই ঘটনায় তদন্ত ও অতিরিক্ত জোর প্রয়োগ করা থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে বিরত রাখতে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

উপরন্তু, পেট্রোল বোমা হামলা ঠেকাতে যা যা করা দরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে সেটাই করার সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অ্যাডামস বলেন, জানমাল নিরাপত্তা রক্ষা করার দায়িত্ব রয়েছে সরকারের। কিন্তু একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীকে জানানো উচিত, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে তাদের জবাবদিহিতা করতে হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ইতিহাস বাংলাদেশে অনেক পুরাতন।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বিরোধী বিএনপির বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতা ছাড়াও দলটির সাত হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নেতা-কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। দুই সপ্তাহ তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। তার বাসভবনের (রাজনৈতিক কার্যালয়) ইউটিলিটি সুবিধাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলাও করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এখন তিনি মূলত গ্রেফতার হওয়ার পথে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বেশকিছু দেশ ইতিমধ্যে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব প্রভাব থাকা দেশ ভারতকে সহিংসতা বন্ধের ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা উচিত বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অ্যাডমস বলেন, ‘বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় বিশ্ব সম্প্রদায় দীর্ঘদিন মুখ বুঝে থাকতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে তিনি বলেন, রক্তস্রোত না থামলে অন্যদেশ তাদের ওপর শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করবে।

প্রতি মুহুর্তের খবর পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন