কুমিল্লার হোমনায় আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি

Share Button

Homna Pourosova2

রিপোর্ট:-দৈনিক মুক্তকন্ঠ,
প্রকাশ: ৩১ জুলাই. ২০১৫। সময়: ১২.০২.PM

কুমিল্লা-২ আসনের হোমনা উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা দিন দিন চরম অবনতির আকার ধারন করেছে। এখানে জুয়ারিদের উৎপাত খুন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি এযেন নিত্যদিনের মামুলি ঘটনা হয়ে পড়েছে। আর অবাদে বেচাকিনি হচ্ছে, গাঁজা, বিয়ার, ইয়াবাসহ মরণঘাতি মাদক। এই উপজেলায় আগে নির্দিষ্ট একটি স্থানে জুয়ার আসর বসলেও এখন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সন্ধ্যার পর বসছে কয়েকটি স্পটে টোকেনদিয়ে কোটি টাকার জুয়ার আসর। এছাড়াও থানার অভ্যন্তরে দাগি সন্ত্রাসী ও দালালদের উৎপাত এবং মুখোশধারী অচেনা সন্ত্রাসীদের আনাগোনা, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা মারধর বাড়িঘর ভাংচুর, নামকরা জুয়ারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করে রহস্যজনকভাবে ছেড়ে দেয়া আবার নিরীহ নিরপরাধ মানুষদের আটক করে মিথ্যা মামলা দেয়া এবং গ্রেফতার বাণিজ্যসহ নানাভাবে হয়রানি করাসহ থেমে নেই ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির ঘটনাও। ফলে রাহাজানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লুটপাট-ভাংচুর এখন এখানে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। সর্বশেষ গত ২৮জুলাই উপজেলার ঘনিয়ারচর গ্রামের সাদেক (৩৫) নামে এক যুবককে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হাত-পা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে জুয়ারি সন্ত্রাসীরা। এর আগে মাদকের টাকা ভাগা-ভাগা নিয়ে ২২মে উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে মোঃ জজ মিয়াকে (৪৬) ছুড়িকাঘাতে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায়। এছাড়াও ১৩ জুলাই রাতে ভিটি ভাষানিয়া গ্রামে স্বামি-স্ত্রীকে এসিডে জ্বলসে দেয় সন্ত্রাসীরা। ৭ জুন চারকুরিয়া গ্রামে নানার বাড়িতে দ্বিতীয় শ্রেণী ছাত্রী, ১ জুন পাথালিয়া কান্দি গ্রামে গৃহবধূকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ও ৩১ মে উপজেলার সদরের বাসস্ট্যান্ডে ৩ বছরের বেদে মেয়ে ধর্ষনের শিকার হয়। এদিকে সাদেকের মত একই কায়দায় গত বছরের ১৬ অক্টোবর উপজেলার ঝগড়ারচর গ্রামে করিম নামে এক কৃষককেও কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ছাত্রলীগের কতিপয় সন্ত্রাসীরা। ওই ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ খুনি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে উল্টো তাদের সাথে যোগসাজস করার ফলে একের পর সন্ত্রাসী তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে পরে ওই গ্রামটি। পক্ষেÑবিপক্ষে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, লুটপাট, চুরি-ডাকাতিসহ মোট ৭টি মামলা রুজু করা হয়। এর মধ্যে ৬টির পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে।

তবে ১৪ মে উপজেলার পোদ্দার পাড়া একই পরিবারের মা-মেয়ের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা উদঘাটন না করায় এবং খুনি ও এসিড সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ফলে পুলিশের উপর এখানকার জনগণের আস্থা হ্রাস পেয়ে ক্রমেই বেড়ে চলেছে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ। সন্ত্রাসীরা এতটাই বেপরোয়া হয়েছে যে জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধা ও জাতির বিবেক নামে পরিচিত সাংবাদিকদের উপরও সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তাদের বাড়ী-ঘর ভাংচুর, লুটপাট করাও যেন সহসা বেপার মাত্র। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছনা ও হামলার শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া গত ২৮ মে ঝগড়ারচরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ হোসেন চৌধুরীর পরিবারের উপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনা এবং উপজেলার একটি মাদকের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রকাশ্যেই ইয়াবা সম্রাটের হাতে সিনিয়র এক সাংবাদিক লাঞ্ছিত হন। এবং সম্প্রতি রামকৃষ্ণপুরে জামাতের নেতার হাতে সিনিয়র আরেক সাংবাদিকের বাড়ি দখল ও লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটে। গত মে মাসে উপজেলার গোয়ারী ভাংগা স্টীল ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় ডাকাতিকালে তিন ডাকাত এবং বিজয়নগর গ্রামে গরু চুরি করায় শ্রীমদ্দী ও মধ্যআকালিয়া গ্রামের দুই চোরকে আটক করা হয়। তবে হোমনা বাগমারা, কৃষি ইন্সটিউট সামনে, মঙ্গলকান্দি, বাবরকান্দিসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও নামকরা ডাকাতদের গ্রেফতারে কোন অগ্রগতি নেই বলে জানায় স্থানীয়রা। অপরদিকে রামকৃষ্ণপুরের এক সময়ের কুখ্যাত ডাকাত মইজ্জা ও তার ছেলে মানিকের মাদকের রাজ্য পরিচালনা করতে সরাসরি পুলিশের ভূমিকা রয়েছে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়। এছাড়াও উপজেলার মাথাভাংগা গ্রামের নামকরা জুয়াড়ী আলেক, খবির খা, আলাউদ্দিনসহ ৪জনকে এবং মনিপুরে ছালাম, জামাল, মোজাম্মেলসহ ৬জুয়ারীকে এএসআই উজ্জল আটক করে মোটা অংকের লেনদেনে ছেড়ে দেয়াসহ এমন শত শত গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

ফলে স্থানীয় রাজনীতিক, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ডাক্তার, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশা শ্রেণীর মানুষের পক্ষ থেকে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানায়। না হলে যে কোন সময় আরো বড় ধরনের অপরাধ সংগঠিত হওয়ার আশংকা করছেন অভিজ্ঞ ঐ মহলটি। তারা প্রশাসনের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থার জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার ও দলের অন্তর কোন্দলকেও দায়ী করেছেন। নেতৃবৃন্দ বলছেন, বর্তমান ওসি হোমনায় যোগদান করার পর থেকে খুন, ধর্ষন, চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি ও ঠান্ডা মাথায় অবাদে মাদক বেচাকিনিসহ প্রশাসনের নাকের ডগায় জুয়ার আসরসহ নানা অপরাধে উঠতি বয়সের যুব সমাজসহ পুরো হোমনাকে অক্টোপাসের মতো ঝাপটে ধরেছে। আর এসব অপরাধ কর্মকান্ডের হোতাদেরকে ওসি প্রকাশ্যে সমর্থন করে যাচ্ছে। ফলে বছরখানেকের মধ্যে এসব অপরাধ কর্মকান্ড চুড়ান্ত আকার ধারন করে। কুমিল্লা-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আমির হোসেন ভূইয়া জানান, যদি পুলিশের কোন অবহেলা থাকে আমরা জানতে পারি তবে এর ব্যবস্থা অবস্যই নেয়া হবে। কোথাও মাদক ও জুয়া চললে সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কথাও তিনি বলেন। হোমনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ জানান, আমি পুরো ঘটনা না জানলেও কিছু ঘটনা শুনেছি। হোমনায় আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে যা প্রয়োজন তা-ই করবো। তবে আমি মনে করি যে কোন অপরাধের মূলেই মাদক ও জুয়া। হোমনা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোঃ ইসমাইল হোসেন সিরাজি জানান, এখানে আইন শৃঙ্খলা অবনতি না চরম অবনতি হয়েছে। যেভাবে পেশাদার দালালদের উৎপাত চলছে! সাধারন মানুষ থানায় প্রবেশের কোন সুযোগ নেই।

হোমনা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন বাবুল বলেছেন, আইন সবার জন্য সমান। এখানে দল-বিদল মুখ্য নয়; তবে একটা মহলের কাছে থানা প্রশাসন জিম্মি হওয়ার ফলেই এমনটি ঘটছে। পৌর আওয়ামীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ মোসলেম সরকার জানান, আমার রাজনৈতিক জীবনে এমন ঘটনা কখনো চোখে পরেনি। প্রতিদিনই ধর্ষণ ও খুন, মাদক এবং জুয়াই এর জন্য বেশী দায়ী।বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বলেন, প্রকাশ্যে এভাবে কুপিয়ে হত্যা এবং ৩-৮ বছরের শিশু ধর্ষণের মত ঘটনা শুধু হোমনা নয়; সারা বিশ্বকেই নাড়া দেয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের উপড় সন্ত্রাসী হামলা করার সাহস একমাত্র প্রশাসনের দুর্বলতার কারনেই হয়ে থাকে। হোমনা উপজেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হোমনা উপজেলা আইন শৃঙ্খলার তিনটি মিটিংয়ে প্রকাশ্যে মাদক বেচাকিনি, জুয়ার আসর ও অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও লাভ হয়নি। উল্টো জুয়ারি ও সন্ত্রাসীদের হুমকি-ধামকি খেতে হয়। বলতে গেলে হোমনার মানুষ এক প্রকার জিম্মি দশায় আছে বলেও তাঁরা মনে করেন।

প্রতি মুহুর্তের খবর পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করুন