রিপোর্টঃ-মোঃ সফিকুর রহমান সেলিম
ঢাকা, ০৮ অক্টোবর ২০১৪।
হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে কাউকে ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে মস্তিষ্ক কাজ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এ অবস্থাতেও প্রায় তিন মিনিট পর্যন্ত আশপাশে কি ঘটছে, তা বুঝতে বা মনে রাখতে পারে মানুষ, এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক গবেষণায়।
ব্রিটেনের একদল গবেষক দীর্ঘ চার বছর এ বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, এমন রোগীদের কাছ থেকে ‘মৃত্যু’র পরের অভিজ্ঞতা তাঁরা জেনেছেন। পাওয়া গিয়েছে, ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ঘোষিত হওয়ার পরও মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছেন এমন রোগীদের ৪০ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা কোনো না-কোনোভাবে সচেতন ছিলেন।
বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ হওয়ার ২০-৩০ সেকেন্ডের মধ্যে মস্তিষ্কও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সে ক্ষেত্রে বাইরের জগতে কী কী হচ্ছে, তা মনে রাখা কোনও ‘মৃত’ ব্যক্তির পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু নতুন এই পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, ‘মৃত্যু’র পরও কোনও ব্যক্তি ৩ মিনিট পর্যন্ত বহির্জগতের ঘটনাবলী সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন। পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর সেই ঘটনাবলী ব্যাখ্যাও করেত পারেন সেই ব্যক্তি।
স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রিসার্চ ফেলো চিকিত্সক স্যাম পারনিয়ার নেতৃত্বে এই গবেষণা হয়।
তিনি জানিয়েছেন, যে সমস্ত রোগীরা মৃত্যুর কাছাকাছির অভিজ্ঞতা ব্যাখ্যা করেছেন, সে সবঘটনা পরম্পরার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তবে এক ব্যক্তি এ ব্যাপারে ‘খুবই বিশ্বাসযোগ্য’ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, চিকিত্সক এবং নার্সরা যখন তাঁকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন, তখন সবকিছুই তিনি বুঝতে পারছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, সে সময় ওই ঘরের এক কোণা থেকে স্বচক্ষে পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া দেখছিলেন তিনি। প্রমাণ হিসেবে ৫৭ বছরের ওই সোশ্যাল ওয়ার্কারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিলে মস্তিষ্ক কাজ করতে পারে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিন মিনিট পর্যন্ত ওই ব্যক্তি সচেতন ছিলেন। ওই কক্ষে যা যা হয়েছিল, সে সবই তিনি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ওই ব্যক্তি দুই বার একটি মেশিনের ব্লিপ শুনতে পারেন। প্রতি তিন মিনিটে ওই মেশিন থেকে এমন শব্দ হয়। এর সাহায্যে জানা গিয়েছে, ব্যক্তি কতক্ষণ পর্যন্ত সচেতন থাকতে পারেন। তাঁর বক্তব্য খুবই বিশ্বাসযোগ্য ছিল। এমনকি তিনি যা যা বলেছিলেন, সে সবই তাঁর সঙ্গে হয়েছিল।’
ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রিয়ার মোট ১৫টি হাসপাতালের ২,০৬০ জন রোগীর ওপর এই সমীক্ষা করেন পারনিয়া।
যাঁরা প্রাণ ফিরে পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ বিস্তৃত পরিসরে তাঁদের স্মৃতিশক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন, ৯ শতাংশ ব্যক্তি মৃত্যুর কাছের অভিজ্ঞতার সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্রথাগত সংজ্ঞা দিতে পেরেছেন এবং ২ শতাংশ ব্যক্তি স্পষ্ট মনে করতে পেরেছেন যে, তাঁরা সেই সময়ের মধ্যে কী কী ‘দেখেছেন’ বা ‘শুনেছেন’।