রিপোর্টারঃ-মোঃ সফিকুর রহমান সেলিম,ঢাকা
০৩ অক্টোবর ২০১৪
সাভারের সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমানের শ্বশুর মালয়েশিয়ায় অপহৃত হওয়ার দুই দিন পর সে দেশের পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এনামের তৃতীয় স্ত্রী ডা. ফরিদা পারভীনের বাবা ফজলুল হক বুধবার রাতে দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে কুয়ালালামপুরের সেপাং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে অপহৃত হন। তারপর সেখান থেকে কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবিতে দেশে যোগাযোগ করা হয় বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।
পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ‘মুক্তিপণের টাকা হাতবতলের’ সময় শুক্রবার সিরাজগঞ্জ থেকে দুইজনকে আটক করে র্যাব। তাদের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় এক অপহরণকারীর সঙ্গে র্যাবের যোগাযোগও হয়। এরইমধ্যে ফজলুল হককে তারা ছেড়ে দিলে মালয়েশিয়া পুলিশ তাকে উদ্ধারের পাশাপাশি নয়জনকে আটক করে বলে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান।
তিনি বলেন, “আমি জানতে পেরেছি, ফজলুল হককে উদ্ধার করে নিরাপদেই রাখা হয়েছে। ডা. এনামের সাথে যোগাযোগ করেও জানতে পেরেছি, তিনি তার শ্বশুরের নিরাপদে থাকার খবর পেয়েছেন।”
ফজলুল হকের শ্যালক ইউসুফ আলী দৈনিক মুক্তকন্ঠকে বলেন, বুধবার রাতে নির্ধারিত সময়ে দেশে না ফেরায় তিনি তার দুলাভাইয়ের মোবাইলে কল করে বন্ধ পান।
“পরদিন সকালে মালয়েশিয়ার একটি ফোন নম্বর থেকে ছেলে মনিরুল হক মুকুলের মোবাইলে ফোন করে অপহরণের কথা নিজেই জানান ফজলুল হক। খুব দ্রুত মুক্তিপণের অর্থ পাঠাতে পরিবারের সদস্যদের কাছে অনুরোধ করেন তিনি। ”
ইউসুফ জানান, প্রথমে ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হলেও পরে অপহরণকারীরা ‘নমনীয়’ হয়। মুক্তিপণের অর্থ প্রথমে মালয়েশিয়ায় অপহৃতের ব্যাংক হিসাবে পাঠাতে বলা হলেও পরে দেশেই যমুনা সেতুর পূর্ব পাশে হস্তান্তর করতে বলা হয়।
শুক্রবার সকালে অপহরণকারীদের কথামতো মুক্তিপণের অর্থ নিয়ে ওই জায়গায় পৌঁছানো হলেও তা নিতে কেউ আসেনি বলে দাবি করেন তিনি।
তবে র্যাবের জিয়াউল আহসান বলছেন, মুক্তিপণের ৭০ লাখ টাকা লেনদেনের সময় র্যাব-১২’র একটি দল সিরাজগঞ্জ থেকে আল আমিন (২৭) ও নজরুল ইসলাম (৩১) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে, যারা সম্পর্কে মামাত-ফুপাত ভাই।
এদের মধ্যে আল আমিনের ভাই সায়েদার আলী মালয়েশিয়ায় ফজলুল হককে অপহরণের সঙ্গে জড়িত বলে জিয়াউল আহসান জানান।
“তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর সায়েদার আলীর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়। সে প্রথমে তার ভাইসহ দুইজনকে ছেড়ে দিতে বলে, তা না হলে ফজলুল হককে হত্যার হুমকি দেয় সে। তবে আমরা তাকে বলি, সে ফজলুল হককে ছেড়ে না দিলে আমরা তার পরিবারের সবাইকে ধরব। এরপর চাপে পড়ে সে ফজলুল হককে মালয়েশিয়ায় বাঙালি কমিউনিটির হাতে ছেড়ে দিলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ”
মালয়েশিয়ায় আটক নয় জনের মধ্যে কতোজন বাংলাদেশি- সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি এই র্যাব কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঢাকা-১৯ এর সাংসদ ডা. এনামুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।
ফজলুল হকের ছেলে মনিরুল হক মুকুল জানান, বেসরকারি সংস্থা প্রশিকা থেকে অবসর নেওয়ার পর তার বাবা মালয়েশিয়ায় ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসার কাজে প্রায়ই তাকে মালয়েশিয়া যেতে হতো।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় সিঙ্গাপুর সীমান্তঘেঁষা জহুরবারো এলাকায় পায়রা গ্লোবাল নামে নতুন একটি রেস্তোরাঁ চালু করতে সেখানে যান ফজলুল হক। বুধবার রাতে তার ঢাকায় ফেরার কথা ছিল।
ওই রেস্তোরাঁয় ফজলুল হকের অংশীদার হিসেবে আছেন আরেক বাংলাদেশি নাগরিক বরিশালের বাসিন্দা হারুন-উর-রশিদ। ফজলুল মালয়েশিয়া গিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে উঠতেন। আর সেখানে যাতায়াতের জন্যে দেলোয়ার নামে বাংলাদেশি গাড়িচালকের সহায়তা নিতেন বলে মুকুল জানান।
তিনি বলেন, “বাবা দেলোয়ারের ট্যাক্সি ক্যাবে চেপেই বিমানবন্দরে আসছিলেন। আমরা এখান থেকে দেলোয়ারের মোবাইলে যোগাযোগ করলে সে জানায়, বিমানবন্দরের দুই কিলোমিটার আগেই তিনি নেমে গেছেন। কিন্তু পরে অপহরণের বিষয়টি জানতে পারি।”